ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলম গ্রেপ্তার ও সরকারের সঠিক অবস্থান ও এক বিতর্কিত সুবিধাবাদীর আখ্যান

ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলম গ্রেপ্তার ও সরকারের সঠিক অবস্থান

ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলম গ্রেপ্তার ও সরকারের সঠিক অবস্থান ও এক বিতর্কিত সুবিধাবাদীর আখ্যান

আপনার কেমন প্রতিক্রিয়া হয় যখন দেখেন আমাদের প্রতিভাবান ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নির্যাতন সহ তাঁদের সততা এবং  বিবেকের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ আর বাক-স্বাধীনমুক্ত করা হচ্ছে? প্রতিভা আর সংগ্রামের মানে কি কেবল নৈরাজ্য, বিনাশ, মাস্তানি, উসকানি আর বিশৃঙ্খলার উদ্দীপনায় নিহিত? শিক্ষা, প্রতিভা আর সংস্কৃতির লক্ষ্য কি  উপকারী আদর্শের সরুপ ঘটানো আর মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলা নই? একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা কতটুকু যেতে পারি? এই প্রশ্নগুলো সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং পুরস্কার প্রাপ্ত ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমের উপর পুলিশি নির্যাতনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সাথে সম্পৃক্ত।

অসংখ্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রিন্ট আর স্যাটেলাইট মাধ্যম, অধিকার সংস্থা, বুদ্ধিজীবী মহল, রাজনৈতিক সংস্থা সমূহ ২৯ জুলাই ঢাকার শহিদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টন্টমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোকে কেন্দ্র করে ‘ নিরাপদ সড়ক’ এর দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের পর শহিদুল আলমের গ্রেপ্তার এক কঠোরভাবে সমালোচনা করেছে।

যা আল-জাজিরা’র অনলাইনের ভাষ্যমতে আল-জাজিরাকে  স্কাইপের মাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারের পরেই ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক এবং হানিকর’  মন্তব্য করায় ৫৭ ধারায় শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাক্ষাৎকারে জনাব শহিদুল আলম স্বীকার করলেন যে ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনটি প্রকৃতপক্ষে নিরাপদ সড়কের আন্দোলন ছিল না, বরং ‘বৃহত্তর কোন একটা কিছু সেখানে ছিল’ । তিনি বলেছিলেন যে বর্তমান সরকারের শাসন করার জন্য জনগণের কোন রায় নাই।

প্রশ্ন হলো, একটি অরাজনৈতিক শান্তি-প্রিয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেনো তিনি সরকার ‘বৈধ না অবৈধ’ তর্কে জড়িয়ে দিলেন? ব্যাংক লুট, গণ-মাধ্যমের কণ্ঠরোধ, জোরপূর্বক গুম, সকল ক্ষেত্রে ঘুষ, শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির দরুন জনগণের ক্ষোভের ফলাফল হলো ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলন। তাই যদি হয়, ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনটি আর ‘অকলুষিত’ থাকলো কোথায়, এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনটি যে শেষ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে ‘মঞ্চ’ হয়ে যায়নি?

তিনি আমাদের ইঙ্গিত করছেন যে ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনের সাথে যানবাহন চালকদের বেপরোয়া আর অতিরিক্ত গতিতে চালানো এবং লোভী বাস মালিকদের কোন সম্পৃক্ততা নেই, বরং আন্দোলনটি ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের অবস্থান নড়বড়ে করা ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে একটি সামগ্রিক উপায় ? আরে তা না হয় হলো, কিন্তু সামগ্রিকভাবে ব্যক্তি এবং জাতীয় স্বার্থে আপনার বা দেশের কতটুকু লাভ হবে? আন্দোলনের পেছনে শহিদুল আলমের কি কোন স্বার্থ আছে কি? অথবা এটি কি ছিল কেলন আল-জাজিরার অপপ্রচার শহিদুল আলম হলেন যার মাধ্যম? তিনি কি পশ্চিম আর সরকারের মধ্যে দ্বৈতনীতির খেলা খেলছেন না?

প্রথম কাজ প্রথমে: জনাব শহিদুল আলম ১৯৯৮ সালে ‘পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট’ নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন যা অংশগ্রহণকারীদের ‘আলোকচিত্র এবং সিনেমা তৈরির স্নাতক এবং ডিপ্লোমা মানের সনদ প্রদান করেন। জনাব শহিদুল আলম তা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন। সময় গড়ালে জনাব শহিদুল আলম প্রতিষ্ঠানটিতে তাঁর অবস্থান আর বৈদেশিক অর্থনৈতিক অনুদান পাকাপোক্ত করতে সমর্থ হন। তাও আবার ২০১৪’র ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর, যখন আওয়ামি লীগ ক্ষমতায় আসে।

শেখ হাসিনার আওয়ামি লীগ সরকারে কাছ থেকেই তিনি তাঁর অবৈধ পাঠশালার বৈধতা পান একখণ্ড জমিসহ, যাকে তিনি জনগণের সমর্থনহীন শাসক’ আখ্যা দিয়েছেন। হাস্যকরভাবে, সরকারের বৈধতা-অবৈধতার প্রশ্ন তখন তাঁর নিকট নগণ্য ছিল যখন অনির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে অবৈধ প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃতি খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন।

অনেকে মনে করেন পাঠশালার স্বীকৃতির পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ততটা তৎপর ছিলেন না যাতে করে প্রতিষ্ঠানটিতে তাঁর ‘স্বৈরাচারী’ স্টাইলের শাসনাধিকার বজায় রাখতে পারেন এবং যাকে যখন যেখানে ইচ্ছা কোন বাঁধা ছাড়াই বরখাস্ত করতে পারে। পাঠশালার নামে প্রাপ্ত মিলিয়ন অর্থ তিনি তাঁর ‘দৃক্’ ন্যায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করেন। ২০১১ সালে নেদারল্যান্ড ৮৫ মিলিয়ন পরিমাণের অর্থ পাঠশালার নামে অনুমোদন করেন। প্রতিষ্ঠানটির অর্থ অপনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘প্রতারক’ আখ্যা দেন।

যে কারণে বলতে হবে, ১৮ বছর ঝুলিয়ে রাখার পর প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃতি নিতে বাধ্য হন কারণ উল্লিখিত কোর্সের জন্য সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রয়োজন। তাঁর যুক্তি হলো, ‘ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এতে স্বীকৃতি না দিলেও বৈদেশিক অনেক কর্তৃপক্ষ তাঁর কাজের স্বীকৃতি দেয়।

চলুন আমরা আপাতত, সরকার কি কারণে প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃত দিল সে ব্যাপারে আইনানুগ বিষয় তর্কে না নিয়ে আসি।

আজকাল মানুষের ভাবানুভূতি কিছু অতিপরিচিত পরিভাষা যেমন, ‘ অভ্যুত্থান’ ‘ন্যায়পরায়ণতা’, ‘বুদ্ধিজীবীত্ব’ ,‘বীরত্ব’ আর ‘নাস্তিকতা’র দ্বারা ছিনতাই হয়ে গেছে। শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যে কাউকেই এখন ‘অভ্যুত্থানকারী’’ রূপে জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। প্রশাসনিক বিড়ম্বনার বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে হয়ে যাচ্ছে ‘ন্যায়ের’ ধারক। আর বস্তাপচা, অপ্রমাণিত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে সরবরাহ করা তথ্যের জন্য রূপান্তরিত হচ্ছে ‘বুদ্ধিজীবী’তে; আর মনগড়া রাজনৈতিক পেশির ব্যবহারে এবং প্রথাগত ধর্মীয় আচারের বিরুদ্ধে কথা বললেই দেয়া হচ্ছে ‘নাস্তিকতার’ খেতাব।

‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনের কথায় উপনীত হতে হলে এটা নিশ্চয় স্বীকার করে নিতে হবে যে, আন্দোলনটি প্রথমার্ধে একটি ‘অকলুষিত’ এবং ‘প্রশ্নহীন’ আর ‘নিঃশর্ত দাবি ছিল সবার। বিশ্ব-ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী রোড ট্র্যাফিক ইনজুরিতে বাংলাদেশ ১০৩, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এ দেশে প্রতি ১০০,০০০ মানুষে ১৩.৬ জন ট্র্যাফিক ইনজুরিতে মারা যায়। গড়ে প্রতিদিন ২০ জন মানুষ মরছে। এহেন অবস্থায় ‘নিরাপদ সড়কের দাবিটি সময়োপযোগী সেই সাথে এটি একটি দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের জীবন রক্ষার দাবি।

এরূপ পরিস্থিতির অবসানের জন্য বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পথচারী-যাত্রী বান্ধব আইনের প্রত্যাশা করে আসছিলেন যাতে করে বেপরোয়া অপরাধী চালকেরা দুর্ঘটনা করে বিনা শাস্তিতে পার পেয়ে যেতে না পারে। দুর্ঘটনা আর তাতে যথোপযুক্ত জীবিকা নির্বাহের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার মূল্য অসহনীয় যে দেশে Out-Of-The-Pocket স্বাস্থ্য ব্যয় এখনো ৬৪%।

দিন গড়ার সাথে সাথে, ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলন রাজনৈতিক রূপরেখায় জড়িয়ে পড়েছে। এটি কিছু সুবিধাবাদি মহলের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার অ্যাজেন্ডা হয়ে উঠেছে। প্রথমার্ধে আমি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছি, এই আন্দোলন কতটা শান্তশিষ্ট আর অবৈরী ছিল জনগণের সম্পদের দিকে। ৫০০ বাস ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়া, পিকেটিং আর লুট করার মতো সকল ঘটনা কিছু হাই-স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল অসাধ্য কাজ।

ধ্বংসাত্মক, অচলকারী কাজ এতে স্থান পেলো তখনই যখন কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের এই আন্দোলনে প্রবেশ ঘটলো। সংবাদ মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে যে, ভাড়া করা মাস্তান, সন্ত্রাসী দলের সন্ত্রাসী এবং কিছু ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের লোকেরা বিরোধী দলের সাথে মিশে গিয়ে রাস্তায় নেমেছিল রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে অস্থির করে তুলতে। অনেকে যারা অনেক আগেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছে তারাও সাদা রঙের ইউনিফর্ম এঁটে আন্দোলনে প্রবেশ করেছে।

অভূতপূর্বভাবে,  দেশব্যাপী সাদা রঙের ইউনিফর্ম বিক্রি আকাশচুম্বী হয়ে যায় রাতারাতি। গুজা, ঘৃণ্য বাক্য, অপপ্রচার, গালমন্দ, কুরুচিপূর্ণ সাইন, আর অনৈতিক বাক্যের প্লেকার্ড ধরিয়ে দিয়ে শিশুদের ব্যবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। পুলিশ পাহারায় একটি অকলুষিত সাদাসিধে মিছিল হয়ে উঠলো রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের একটি প্লাটফর্ম।

ফটোশপকৃত অপ্রাসঙ্গিক আর বিভ্রান্তিমূলক ছবি, বানানো কাহিনি, ভিত্তিহীন তথ্য, বিভ্রান্তিমূলক খবর, হলুদ সাংবাদিকতা বাংলাদেশের মানুষকে একইভাবে উত্তেজিত করে তুলেছে ঠিক যেমনটা তুলেছিল ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচারের সময়।

এটা ছিল ঠিক একই অপপ্রচার মেশিন যা দাবি করেছিল যে ২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহের সময় কালো ইউনিফর্মে অসংখ্য ভারতীয় সেনা এসে এই বিদ্রোহ ঘটিয়ে শত শত বাংলাদেশি সেনার লাশ গুম করেছিল। এটি সেই প্রপাগান্ড মেশিন যারা গুজা ছড়িয়ে ছিল যে ২০১৩’র হেফাজত-ই-ইলমাম আন্দোলনের সময় রাতের আঁধারে ২০,০০০ মানুষকে মেরে ভারতে লাশ গুম করেছিল। আর যারা দাবি করে বসেছিল এক যুদ্ধাপরাধীকে চাঁদে দেখা গিয়েছিল বলে।

বরং কে না চেষ্টা করেছিল এক নজর দেখতে! ঠিক তারাই ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনের সময় সরকার দলের মাস্তানদের কর্তৃক মেয়েরা ধর্ষিত, হত্যা সহ গণ-হত্যা হয়েছ বলে গুজব ছড়িয়েছে। অনেক সচেতন মানুষ তা পুরোদমে গিলেছে কেবল মাত্র আওয়ামি লীগ ক্ষমতায় আছে বলে। ‘বিবেকের কাছে বন্দি’ হতে আমাদের ঢের বাকি আছেই বটে যেখানে, যে সমাজে, যে সংস্কৃতিতে আমরা কেবলই ‘রাজনীতির বন্দি সেখানে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা মানুষের মানবিক ‘বিবেকের’ উপর কর্তৃত্ব করবে। যেখানে বিবেক, পরিমিতি, নীতি কথা, নৈতিক যাপন, নাগরিক সংযম আর ভাল’র পরিচর্যা রাজনীতিবিদদের দয়ার উপর নির্ভর করে, রাজনীতি সেখানে জীবন যাত্রার সবক্ষেত্র বিরাজমান।

রাজনীতিবিদরাই সে সমাজে তাদের সবকিছুর সিদ্ধান্ত, সজ্ঞা, সঙ্খলন এবং বৈধতা দেবে যদি আমরা সত্যের কাছে মারা যায় এবং সুন্দরের কাছে থাকি অন্ধ। আমরা সত্য আর সুন্দরের কাছে মৃত আর অন্ধ শুধু মাত্র আমাদের রাজনৈতিক মত-পার্থক্য বিদ্যমান বলে।  যেকোনো সরকারের ন্যায় বাংলাদেশ সরকারও এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বদ্ধপরিকর হয়।

‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’টি যতই বিতর্কিত হোক না কেনো অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত হলেও, আওয়ামি লীগ সরকারই কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে পেরেছে। যার কারণে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অনেক অপবাদ রটনার মুখোমুখি হয়েছি, যা একটি আদালা বিতর্কের বিষয়।

সরকারকে ‘অনির্বাচিত’ আখ্যা দিয়ে জনাব শহিদুল আলম অন্য কোথাও অন্য কিছুর ইঙ্গিত করছেন। ব্রিটিশ মানবাধিকার কর্মী ডেভিড বার্গম্যান, যিনি এর সাবেক রিপোর্টার ছিলেন, জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশের নেতাদের সাথে আঁতাত করে ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’ বন্ধ করার জন্য ২৩ জনের একটি গোপন দল গঠন করেন। এমন না যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান নি। তাঁদের বিচার দাবির ধরনটি ছিল ‘ডিপ্লোমেটিক’ এবং ‘চয়েক ভিত্তিক’। বৈশিষ্ট্য আইনজীবী ডক্টর কামাল হোসাইনের জামাতব ডেভিড বার্গম্যান আদালতের সিদ্ধান্তের বৈধতা প্রশ্নে অন্যান্যদের সাথে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হলে অনেকে ক্ষমা চাইলেও সেই ২৩ জন কখনো ক্ষমা চাননি।

আল-জাযিরা সম্পর্কে সব জেনেও জনাব শহিদুল আলম পশ্চিমা গণ-মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য আল-জাযিরাকেই মাধ্যম হিসেবে বেচে নেন। কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন খালিফা কর্তৃক আর্থিক অনুদানে প্রতিষ্ঠিত আল-জাযিরা ভিন্নমতাবলম্বী দর্শন এবং মিশর-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ এর সমর্থন জন্য দারুণভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়ে। সুন্নি মুখী আর বিরোধী অবস্থান এবং জঙ্গিদের কাছে আর্থিক সহায়তার কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ, সৌদি আরব, বাহরাইন, এবং মিশরে আল-জাযিরা ২০০৭ এর ‘কাতার সংকটের’ সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সৌদি মালিকানার BBC World Service এর আরবি ভাষার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর BBC’র সংবাদকর্মীদের নিয়ে ৫০০ মিলিয়ন রিয়েল আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে আলজাজিরার যাত্রা শুরু হয়। জনাব শহিদুল আলম আল-জায়িরাকে, না আল-জায়িরা জনাব শহিদুল আলমকে নির্বাচন করলেন তা স্বার্থের বিষয়।

হ্যাঁ, শেখ হাসিনা তাঁর আচার-আচরণে ‘শৈরাসারিক’। কিন্তু সব কিছু রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রের মানুষের জন্য। সুষম আর্থিক বৃদ্ধি, দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মধ্যম-আয়ের দেশে উপনীত হওয়া, জঙ্গিবাদের দমন আমরা কোনোভাবেই হালকাভাবে দেখতে পারি না। শেখ হাসিনা না হলে কেইবা তাঁর চেয়ে ভাল করতে পারবে?

তবুও শেখ হাসিনার ন্যায় তৃতীয় বিশ্বের শাসকদের জন্য এটি অতি-উচ্চাভিলাষী এবং মিথ্যা সম্ভাবনার শামিল। একইভাবে, যখন মালয়েশিয়ান সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহামদ ২২ বছর শাসন করার পর পুনরায় ফিরে আসেন একই লক্ষ্য নিয়ে কেউ তাঁকে ‘স্বৈরাচার’ আখ্যা দেননি।এশিয়ার সব চেয়ে বেশি সময় ধরে শাসন করা প্রধান মন্ত্রী হিসেবে তিনি তাঁর শাসনকালে তাঁর ক্ষমতার বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান। ফলশ্রুতিতে, তিনি মালেয়শীয়ার ‘মুক্তিদাতা’, ‘অদূরদর্শী’ এবং ‘স্বপ্নদ্রষ্টা’ আবির্ভূত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী লী কুয়ান ইয়ে যখন সিঙ্গাপুরকে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে সমর্থ হন তখন কেউই তাঁকে ‘স্বৈরাচার’ বলতে সাহস করেন নি। ‘স্বৈরাচার’ শব্দটি কেবল শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এসে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে। তারপরও বলতে হয় যে, তিনি যেভাবে রাষ্ট্রের আমলাদের সাথে আমলাতান্ত্রিক আচরণ করেন, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করেন, সাম্যবাদ, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং প্রশাসনিক সমতা বিধানে অক্ষমতা দেখান তা অনেকেরই অপছন্দের। কিন্তু তিনিই হলেন আমাদের মন্দের চেয়ে ভালো।

জনাব শহিদুল আলম যা রূপন করেছেন তাই বপন করেছেন। সর্বোপরি, সকল ব্যক্তি স্বার্থ ব্যতিরেখে, রাজনৈতিক খণ্ডন বিসর্জন করে দেশীয় স্বার্থ রক্ষার্থে সকলের বদ্ধপরিকর হওয়া চাই। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, দেশ-প্রেমিকের চেয়ে ‘দেশ-দ্রোহীদের বেশি লালন করছে বাংলাদেশ।

হেফাজত-ই-ইসলামের আন্দোলন থেকে শুরু করে, কোটা সংস্কার আন্দোলন আ ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলন পর্যন্ত বর্তমান সরকার এখনো অনেক ভাল করছে। না, আমরা তা বুঝতে পারি না যতক্ষণ না অধিকতর মন্দতা আমাদের উপর এসে পড়ছে।


Post a Comment

أحدث أقدم